মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

বন্যাকবলিত এলাকায় শিক্ষা নিয়ে শঙ্কা

বন্যাকবলিত এলাকায় শিক্ষা নিয়ে শঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক:

৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তৌহিদ। গত ১৬ জুন সিলেটের যতরপুর এলাকার তাদের বাড়ি তলিয়ে যায় বন্যার পানিতে। ভেসে যায় ঘরের মালামাল। রক্ষা পায়নি তার বইপত্রও। পানিতে ভেসে যাওয়ার সময় কয়েকটি বই উদ্ধার করে তৌহিদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে শুকাতে দেয়। ভেসে যাওয়া বইগুলোর জন্য তার ভীষণ মন খারাপ। নতুন বই কোথায় পাবে সেই চিন্তাও পেয়ে বসেছে তাকে। তার অনেক বন্ধুরও বই ভেসে গেছে বানের জলে। কয়েক মাস আগে পাওয়া নতুন বইগুলো এভাবে পানিতে ভেসে যাওয়ায় তাদের সবার মন ভার।

সিলেট শহরের কিশোরী মোহন বালক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া তৌহিদ আমাদের সময়কে বলেন, সে ওসমানি আইডিয়াল স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তার রোল ১। হঠাৎ বানের পানি এলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ছোট ভাই হাফিজের বই সে ব্যাগে ভরে নেয়। কিন্তু তার নিজের বই পানিতে ভেসে যাচ্ছিল। এ সময় কয়েকটি বই ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে এনে শুকায়। বাকি বই বন্ধুদের কাছ থেকে ফটোকপি করে নেবে। তবে বন্ধুদের অনেকের বইও বানের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে বলে সে জানায়।

কিশোরী মোহন বালক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, হঠাৎ আসা বানের পানিতে তার তৃতীয় শ্রেণি পড়–য়া মেয়ের বইও ভেসে যাচ্ছিল। পানিতে বই ভিজে যায়। বই উদ্ধার করে তিনি শুকিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার পর বোঝা

যাবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্কুলে শিক্ষকদের জন্য কিছু বই আছে। সেই বই শিক্ষার্থীদের দিয়ে যদি সমস্যার সমাধান করা যায় তাহলে ভালো। তবে শিক্ষার্থীদের বইয়ের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করতে হবে।

সিলেটের স্কুলশিক্ষক ফরিদা পারভীন বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই বই সংকট ছিল। বন্যায় স্কুলশিক্ষার্থীদের বিপুলসংখ্যক বইপত্র বানের পানিতে ভেসে গেছে। এখনো অনেক স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগেই যদি আমরা বইয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারি তাহলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রুত বই তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

সিলেট ও সুনামগঞ্জের অন্তত ১ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এরই মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করেছে। সংস্কার না করে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, বইপত্রসহ শিক্ষা সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমরা জানি। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারসহ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা করা হচ্ছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেব।

ক্ষতিগ্রস্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই দেওয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুল চালু হওয়ার পর হয়তো কয়েকদিন দেরি হতে পারে। তবে আমরা তাদের হাতে বই তুলে দেব। প্রয়োজনে আশপাশের জেলাগুলো থেকে এনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে কিভাবে দ্রুত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নিয়ে আসা যায় সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছুটি শুরু হয়েছে। ঈদের পর ক্লাস শুরুর আগেই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের পাশাপাশি বইপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে হবে। বন্যার কারণে শিক্ষার্থীরা এমনিতেই মানসিক পীড়ায় আছে। বই না পেলে তাদের মন ভেঙে যাবে। পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়বে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877